মেসির শাস্তি নিয়ে বিতর্ক

লাপাজের সান হোটেলে বসে সতীর্থদের সঙ্গে কথা বলছিলেন। হয়তো বলিভিয়ার বিপক্ষে ম্যাচটা নিয়েই। তখনই বন্ধুদের কেউ একজন ফোনে খবরটা দিল লিওনেল মেসিকে। হাসিমুখটা হঠাৎ গোমড়া হয়ে গেল মেসির। একটু পর আর্জেন্টাইন ফুটবল অ্যাসোসিয়েশনের জাতীয় দল কমিটির প্রধান মার্সেলো তিনেল্লি এসে নিশ্চিত করলেন—খবরটা সত্যি। ফিফা আনুষ্ঠানিকভাবেই জানিয়েছে। কোচ এদগার্দো বাউজাসহ দলের বাকিরাও তিনেল্লির কাছ থেকেই খবরটা পেলেন—চার ম্যাচ নিষিদ্ধ করা হয়েছে মেসিকে! গোটা দলে তখন থমথমে নীরবতা।
এ ঘটনাটা পরশুর। বলিভিয়ার বিপক্ষে বিশ্বকাপ বাছাইপর্বে আর্জেন্টিনার ম্যাচের ঘণ্টা ছয়েক আগে। ও রকম সময়ে দলের সেরা খেলোয়াড়কে হারানোর খবর বিশাল ধাক্কা হয়ে এল আর্জেন্টিনার জন্য। ভেতরের যন্ত্রণা চেপে রেখে মেসি অবশ্য তারপরও হাসিমুখেই দলের সঙ্গে গেছেন লাপাজের হার্নান্দো সাইলস স্টেডিয়ামে। যদিও নিষেধাজ্ঞার কারণে ডাগআউটে থাকতে পারেননি। খেলা দেখতে হয়েছে গ্যালারিতে বসে। তাঁকে ছাড়া লাপাজের দমবন্ধ করা উচ্চতায় আর্জেন্টিনা ম্যাচটা হেরেছে ২-০ গোলে।
অপরাধ করলে যেকোনো ফুটবলার নিষেধাজ্ঞা পেতেই পারেন। এমনকি লিওনেল মেসিও। বিশ্বের অন্যতম সেরা ফুটবলার বলে তো আর তিনি ছাড় পাবেন না। কিন্তু তারপরও মেসিকে দেওয়া ফিফার এই নিষেধাজ্ঞাটা নিয়ে অনেক বিতর্ক। কেউ বলছেন, এটা লঘু পাপে গুরু দণ্ড হয়ে গেছে। কারও মতে, ম্যাচের ঘণ্টা ছয়েক আগে কোনো দলের সেরা খেলোয়াড়কে নিষিদ্ধ করে দেওয়া অন্যায়।
অভিযোগটা অবশ্য গুরুতরই। গত বৃহস্পতিবার চিলির সঙ্গে বিশ্বকাপ বাছাইপর্বের ম্যাচে সহকারী রেফারিকে স্প্যানিশ ভাষায় কুৎসিত গালি দিয়েছিলেন লিওনেল মেসি। তবে ম্যাচের প্রধান রেফারি সান্দ্রো রিচ্চির প্রতিবেদনে মেসির এই গালাগালির কথা লেখা ছিল না। কিন্তু ম্যাচের পর চিলি ফুটবল অ্যাসোসিয়েশন তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ করে সঙ্গে একটি ভিডিও টেপ পাঠায় দক্ষিণ আমেরিকার ফুটবল কর্তৃপক্ষের কাছে। যেখানে দেখা যায়, মেসি সত্যিই গালি দিয়েছেন সহকারী রেফারিকে। ওই ভিডিও টেপ দেখেই শাস্তির সিদ্ধান্ত নেয় ফিফা।
এ ব্যাপারে ফিফার তদন্তের একটি ফাইল প্রকাশ করেছে আর্জেন্টিনার পত্রিকা ওলে। যদিও সেখানে রেফারি রিচ্চি দাবি করেছেন, তিনি ঘটনাটা দেখেননি। দেখলে ব্যবস্থা নিতেন। যে সহকারী রেফারিকে মেসি গালি দিয়েছিলেন, তিনিও বলেছেন, তিনি নাকি বুঝতে পারেননি মেসি কী বলেছিলেন।
বলিভিয়ার বিপক্ষে ম্যাচটা শেষেই এ নিয়ে কথা বলতে গিয়ে আর্জেন্টিনার কোচ বাউজা বলেছেন, ‘ব্যাপারটা খুবই অদ্ভুত। ফিফার কাছ থেকে এ রকম কিছু আশা করিনি। সবকিছু এত দ্রুত হয়েছে যে আমরা আপিলের সময়টা পর্যন্ত পাইনি! কারও সঙ্গে কথা বলারও সুযোগ হয়নি ম্যাচের আগে। যা-ই হোক, এখন আমরা আপিলের প্রক্রিয়া নিয়ে এগোচ্ছি।’
খবরটা শুনে ম্যাচের আগেই মেসিসহ পুরো আর্জেন্টিনা দলকে সহমর্মিতা জানিয়েছেন দেশটির প্রেসিডেন্ট মাউরিসিও মাকরি। ১৯৮৬ বিশ্বকাপজয়ী আর্জেন্টিনা দলের ফরোয়ার্ড হোর্হে ভালদানোর কাছেও শাস্তিটা বাড়াবাড়ি মনে হচ্ছে, ‘প্রথম কথা হচ্ছে, মেসি যখন নিয়ন্ত্রণ হারায়, তখনো তার শান্ত ভাবটা হারায় না। চার ম্যাচের নিষেধাজ্ঞা তো অবিশ্বাস্য। এটা আর্জেন্টিনার বাছাইপর্বের পথচলা খুব কঠিন করে ফেলবে।’ সাবেক আর্জেন্টাইন কোচ সিজার লুইস মেনোত্তি তো দক্ষিণ আমেরিকার ফুটবলার সংস্কৃতি বিবেচনায় মেসির গালিটাকে খুব বড় অপরাধ হিসেবেই দেখছেন না, ‘ও যেটা করেছে, সেটা তো খুব গুরুতর কিছু নয়। বরং শাস্তিটা বাড়াবাড়ি লাগছে। হ্যাঁ, তাকে শাস্তি দেওয়া উচিত। কিন্তু চার ম্যাচ নয়।’
আনুষ্ঠানিক এক বিবৃতিতে মেসির ক্লাব বার্সেলোনাও চার ম্যাচ নিষেধাজ্ঞাকে ‘অন্যায়’ ও ‘অপরাধের সঙ্গে মানানসই নয়’ বলে মন্তব্য করেছে। আর্জেন্টাইন অধিনায়ক পাশে পাচ্ছেন তাঁর ক্লাব-সতীর্থদেরও। বার্সা ডিফেন্ডার জেরার্ড পিকে বলেছেন, ‘ওকে চার ম্যাচ নিষিদ্ধ করাটা উদ্ভট সিদ্ধান্ত।’ প্রশ্ন তুলেছেন আরেক সতীর্থ লুইস সুয়ারেজও, ‘এটা ভীষণ বাড়াবাড়ি। ওরা (ফিফা) কি এখন খারাপ ভাষা ব্যবহার করার জন্য সবাইকেই চার ম্যাচ নিষিদ্ধ করবে?’ ইএসপিএন, এএফপি, ডেইলি মেইল।
Share on Google Plus

0 মন্তব্য(গুলি):

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন