হাথুরুর চোখ সিরিজ জয়ে

আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতামূলক ক্রিকেটের মধ্যে থাকলে প্রতিদিন অনুশীলন করতে হবে, এমন কোনো কথা নেই। কারণ তখন শরীরকে বিশ্রাম দিয়ে মানসিক প্রস্তুতি নেওয়াই সবচেয়ে ভালো। চন্ডিকা হাথুরুসিংহে অন্তত তা-ই মনে করেন। কাল তাই বাংলাদেশের কোচ রেখেছিলেন ঐচ্ছিক অনুশীলন।
সিরিজের তৃতীয় ও শেষ ওয়ানডের ভেন্যু কলম্বোর সিংহলিজ স্পোর্টস ক্লাব মাঠে সকালে অনুশীলন করে যান মুশফিক, রুবেল, সৌম্য, মোস্তাফিজ, ইমরুল, শুভাগত, নুরুল, শুভাশিস ও সানজামুল। অর্থাৎ ডাম্বুলায় বৃষ্টিতে পণ্ড দ্বিতীয় ওয়ানডেতে খেলা ১১ জনের আটজনই নেই। আসেননি মাশরাফি, সাকিব, তামিম, মাহমুদউল্লাহ, সাব্বির, তাসকিন, মিরাজ ও মোসাদ্দেক। গোটা একাদশের প্রায় পৌনে তিন অংশের অনুপস্থিতি দেখে প্রশ্ন উঠলে হাথুরুসিংহে বলেন, ‘খেলোয়াড়েরা যদি মনে করে, তাদের প্রস্তুতি যথেষ্টই ভালো, তারা সব সময়ই বিশ্রাম নিতে পারে। শ্রীলঙ্কায় ক্রিকেট খেলাটা খুব কষ্টকর। প্রচণ্ড গরম এখানে। খেলোয়াড়েরা যখন আত্মবিশ্বাসী থাকবে এবং মনে করবে ভালোভাবেই প্রস্তুত, আমি তাদের শারীরিক বিশ্রাম দিয়ে মানসিক প্রস্তুতি নিতে বলি।’
ডাম্বুলায় প্রথম ওয়ানডেতে দুর্দান্ত এক জয় ছিনিয়ে নিয়ে বাংলাদেশ তিন ম্যাচের সিরিজে এগিয়ে আছে ১-০ ব্যবধানে। দ্বিতীয় ম্যাচটি বৃষ্টিতে ভেসে না গেলে ওখানেই হয়তো হয়ে যেত সিরিজ জয়। ৩১২ রান তাড়া করাটা সহজ নয়। তবে হাথুরুসিংহের বিশ্বাস, ‘আমরা হয়তো পারতাম। ম্যাচ যেকোনো দিকেই হয়তো যেতে পারত, কিন্তু আগের ম্যাচের উইকেটের চেয়ে উইকেটটা অনেক সহজ ছিল।’
আগামীকাল সকালে শুরু হতে যাওয়া তৃতীয় ম্যাচটি আক্ষরিক অর্থেই ‘ফাইনাল’ হয়ে দাঁড়িয়েছে। বাংলাদেশ সিরিজ জিততে চাইলে এ ম্যাচে তাদের জিততেই হবে। আর সিরিজ ড্র করতে চাইলে জিততে হবে শ্রীলঙ্কাকে। বাংলাদেশের কোচ জয়ের ছবিই আঁকছেন, তবে শর্ত সাপেক্ষে, ‘আমাদের প্রক্রিয়া যদি ঠিক থাকে, আমরা আত্মবিশ্বাসী। আমার তো মনে হয়, আমরা শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ভালোই করব। ঘরের মাঠে তারা খুবই শক্তিশালী দল। আমার তো মনে পড়ে না, শেষ কবে তারা সিরিজের একটি ম্যাচও জিততে পারেনি। আমরা খুবই ভালো জায়গায় আছি। ১-০-তে এগিয়ে আছি, তাই আমরা হারছি না।’
দল হাথুরুসিংহের আত্মবিশ্বাস বাড়িয়ে দিয়েছে গল টেস্টের পর থেকেই। ওই হারের পরই খেলোয়াড়দের শরীরী ভাষায় আমূল বদল দেখছেন কোচ। তাঁর ভাষায়, ‘আপনি যখন জিতবেন, সবকিছুই ভালো দেখাবে। শরীরী ভাষা এবং মাঠে উজাড় করে দেওয়ার চেষ্টাটাকেই আমি সবচেয়ে বড় বদল বলব। গল টেস্টে হারের পর তারা পরস্পরের সঙ্গে বসে কথা বলেছে এবং প্রত্যেকেই সাড়া দিয়েছে দারুণভাবে।’
সিনিয়র ব্যাটসম্যানরা রান পাচ্ছেন, দলের আত্মবিশ্বাসের বড় একটি উৎস এটি। বাংলাদেশের কোচের বড় তৃপ্তির জায়গা এখন সিনিয়রদের ব্যাটিং, ‘এটি নিয়ে আমরা বারবার কথা বলেছি। তুমি যখন সেট হয়ে যাবে, বড় রান করে ফেরো। সিনিয়ররা সত্যিই এ ক্ষেত্রে দুর্দান্তভাবে সাড়া দিয়েছে। আর এ কারণেই তারা নিজেদের প্রস্তুতি নিয়ে এত আত্মবিশ্বাসী থাকতে পারছে।’
আত্মবিশ্বাসটাই দরকার এখন। বাংলাদেশের কোচ যা বললেন, তাতে তো মনে হয় সিরিজ জয়ের জন্য মানসিক সাধনাই করছেন মাশরাফি, সকিব, তামিমরা!
কিন্তু যে উইকেটে সিরিজ জয়ের উৎসব সাজানো হচ্ছে মনে মনে, সেটি কেমন? ‘এটি এখনো অপ্রস্তুত উইকেট, তবে নিশ্চিত থাকুন সামনের দুই দিনে এটি বদলে যাবে’—বলেছেন শ্রীলঙ্কায় এসে বাংলাদেশের হয়ে ইতিহাস গড়া শ্রীলঙ্কান কোচ। একসময় শ্রীলঙ্কার হয়ে খেলে জিতেছেন, আর এখন শ্রীলঙ্কার বিরুদ্ধ শিবিরের কোচ হয়ে জিতছেন। হাথুরুসিংহের কাছে এ এক অনুভূতি, ‘খেলোয়াড় হিসেবে আপনি খেলেন দেশের হয়ে। সেটি অন্য অনুভূতি, এখন আমি চাকরির অংশ হিসেবে দায়িত্ব পালন করছি। সর্বোত্তম উপায়েই আমি সেটি করতে চাই। তবে সব সময়ই জয়ী দলে থাকতে পারাটা আমার ভালো লাগে।’
অর্থাৎ আগামীকালও জয়ী দলের কোচ হিসেবেই মাঠ ছাড়তে চান হাথুরুসিংহে। আর সে জন্যই বলে গেলেন, ‘র্যা ঙ্কিং আপনাদের কাছে, সমর্থকদের কাছে গুরুত্বপূর্ণ হতে পারে। আমার কাছে জয়টাই গুরুত্বপূর্ণ। জয় পেলে র্যা ঙ্কিং আপনাআপনিই বাড়ে।’
Share on Google Plus

0 মন্তব্য(গুলি):

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন